খুলনার কয়রার বেদকাশি গ্রামের কবি এবাদুল্লাহ: দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য জ্যোতি

দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য ভুবনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন কবি এবাদুল্লাহ। ১৮৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের শেখ সরদার পাড়া গ্রামে এই অসামান্য প্রতিভাবান কবির জন্ম। ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই জনপদেই বেড়ে ওঠেন কিংবদন্তি এই সাহিত্যিক।

খুলনার কয়রার বেদকাশি গ্রামের কবি এবাদুল্লাহ: দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য জ্যোতি

খুলনার কয়রার বেদকাশি গ্রামের কবি এবাদুল্লাহ: দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য জ্যোতি

দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য ভুবনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন কবি এবাদুল্লাহ। ১৮৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের শেখ সরদার পাড়া গ্রামে এই অসামান্য প্রতিভাবান কবির জন্ম। ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই জনপদেই বেড়ে ওঠেন কিংবদন্তি এই সাহিত্যিক।

কবি এবাদুল্লাহর সাহিত্য জীবন

স্বল্প শিক্ষিত হলেও এবাদুল্লাহর কাব্য প্রতিভা ছিল অসাধারণ। তাঁর রচিত কবিতায় ছন্দের সুষমা, অনুপম উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও অলংকারের ব্যবহার ছিল চমৎকার। তাঁর কাব্যসম্ভার তৎকালীন পাঠকমনকে মুগ্ধ করেছিল। এমনকি তাঁর কবিতা মানুষের মুখে মুখে প্রবাদে রূপ নিয়েছিল।

তিনি শুধুমাত্র কয়রা বা খুলনা নয়, বরং ভারতের ২৪ পরগনায়ও সমানভাবে পরিচিত ছিলেন। বিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁর কবিতা পড়ে মালা বদল হতো, আর ওয়াজ মাহফিল, সামাজিক অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে তাঁর কবিতার চর্চা ছিল নিয়মিত।

উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ

কবি এবাদুল্লাহর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল:

  1. ঝরাফুল
  2. কাওসার
  3. মালঞ্চ
  4. মুক্তাহার
  5. জরুরী নসিহত

দারিদ্র্যের কারণে এবং সঠিক সংরক্ষণের অভাবে তাঁর বইগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল।

পুনরুদ্ধার ও সংকলন

দীর্ঘ এক শতাব্দী পর তাঁর সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য উদ্যোগ নেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও গবেষক আ.ব.ম. আব্দুল মালেক। তিনি "কবি এবাদুল্লাহ ও তার কাব্যসমগ্র" নামে একটি গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন। সালেহিয়া লাইব্রেরির সহায়তায় প্রকাশিত এই গ্রন্থটি দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য ভুবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

মোড়ক উন্মোচন

সম্প্রতি উত্তর বেদকাশীর ঐতিহাসিক কাছারি বাড়ির বৃক্ষমেলা মঞ্চে "কবি এবাদুল্লাহ ও তার কাব্যসমগ্র" গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

কবি এবাদুল্লাহ: ধর্ম ও সাহিত্যের সাধক

কবি এবাদুল্লাহ ছিলেন একজন সাধক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তাঁর ছন্দময় সাহিত্যকর্ম সমসাময়িক কবিদের আকৃষ্ট করেছিল।

সংকলকের অভিমত

আ.ব.ম. আব্দুল মালেক বলেন, "কবি এবাদুল্লাহ ছিলেন দক্ষিণের সাহিত্য জ্যোতি। আমার সাহিত্যকর্ম আজ স্বার্থক হয়েছে, কারণ আমি এই অমর কবির সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পেরেছি।"

উত্তরাধিকার

কবি এবাদুল্লাহর সাহিত্যকর্ম শুধুমাত্র দক্ষিণ বাংলার জন্য নয়, বরং পুরো বাংলার সাহিত্য ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ। তাঁর সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি।