সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ, অতঃপর শিক্ষককে থানায় আটকে রাখলেন ওসি

সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক শিক্ষককে থানায় ডেকে এনে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু ডেস্কে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবৈধভাবে আটকে রাখা হয় শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথকে।

সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ, অতঃপর শিক্ষককে থানায় আটকে রাখলেন ওসি

সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ, অতঃপর শিক্ষককে থানায় আটকে রাখলেন ওসি!

সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক শিক্ষককে থানায় ডেকে এনে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু ডেস্কে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবৈধভাবে আটকে রাখা হয় শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথকে

ঘটনার বিবরণ

নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ চক প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক। তিনি শহরের হাট-নওগাঁ এলাকার সুদ ব্যবসায়ী লক্ষ্মী রাণীর কাছ থেকে ২০১৬ সালে তিন দফায় ৪.৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। তবে চড়া সুদের বোঝা ও ব্যবসায় ক্ষতির কারণে তিনি পালিয়ে থাকতে বাধ্য হন।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ২০২১ সালে লক্ষ্মী রাণীর শ্বশুরবাড়ির এক প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অস্ত্রের মুখে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপরও তিনি সুদের টাকা পরিশোধ করছিলেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসামর্থ্য প্রকাশ করলে লক্ষ্মী রাণী থানায় অভিযোগ করেন।

থানায় আটকে রাখার অভিযোগ

গত ৫ মার্চ, বুধবার দুপুরে ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী ফোন করে শিক্ষক নগেন্দ্র নাথকে থানায় আসতে বলেন। থানায় পৌঁছানোর পর তিনি জানতে পারেন, লক্ষ্মী রাণী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এরপর ওসি তাকে সাড়ে তিন ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখেন এবং চাপ প্রয়োগ করেন যেন সুদের টাকা পরিশোধ করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন,
"আমি ইতিমধ্যে সুদ বাবদ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এমনকি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা শোধ করেছি। তারপরও তিনি দাবি করেন যে, আমি কোনো টাকা দিইনি।"

এক পর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজনের হস্তক্ষেপে ওসি নগেন্দ্র নাথকে ছেড়ে দেন, তবে শর্ত দেন আগামী রবিবার লক্ষ্মী রাণীকে অন্তত ২-৪ হাজার টাকা দিতে হবে

ওসির কড়া অবস্থান ও সুদখোরের নাটক

প্রাথমিকভাবে ওসি মামলা করার হুমকি দিলেও পরে তা রেকর্ড করেননি। লক্ষ্মী রাণী থানার বাইরে এসে নিজেকে ‘গরিব’ দাবি করে বলেন,
"ওই শিক্ষক আমার বাসায় পড়াতো, আমি তাকে ধার দিয়েছি। এখন আমার টাকা চাইতে এসেছি। আমি সুদের ব্যবসা করি না।"

অন্যদিকে, ওসি দাবি করেন,
"দাদন ব্যবসায়ী তারাই হয়, যাদের পেশি শক্তি থাকে। অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে মামলা হবে।"

উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া

এই বিষয়ে রাজশাহী উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) সারোয়ার জাহান বলেন,
"সুদের টাকা আদায়ের জন্য কাউকে থানায় আটকে রাখার কোনো আইনগত বিধান নেই। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

সুষ্ঠু সমাধান ও বিচার দাবি

ভুক্তভোগী শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ ও তার পরিবার সুষ্ঠু সমাধান ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ চান। তার ছোট ভাই মিলন চন্দ্র দেবনাথ বলেন,
"আমার ভাইয়ের নামে কোনো লিখিত অভিযোগ ছাড়াই ওসি তাকে আটকে রাখেন। সুদের টাকা না দিলে মামলা দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অমানবিক।"

স্থানীয় শিক্ষকমহল ও সচেতন নাগরিকরা সুদের নামে অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন

নওগাঁ প্রতিনিধি: উজ্জ্বল কুমার সরকার