উড়িরচরে সচেতন ছাত্র জনতার আয়োজনে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালিত

চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন উড়িরচর বাসীদের প্রানের দাবী উড়িরচরের নদী ভাঙ্গননরোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যবস্থা বিনির্মানে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল দশ ঘটিকায় বাংলা বাজার, উড়িরচর, সন্দ্বীপ, নোয়াখালীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন উড়িরচর সচেতন নাগরিক ছাত্র জনতা।

উড়িরচরে সচেতন ছাত্র জনতার আয়োজনে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালিত

উড়িরচরে সচেতন ছাত্র জনতার আয়োজনে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালিত 


চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা  থেকে বিচ্ছিন্ন উড়িরচর বাসীদের প্রানের দাবী উড়িরচরের নদী ভাঙ্গননরোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যবস্থা বিনির্মানে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল দশ ঘটিকায় বাংলা বাজার, উড়িরচর, সন্দ্বীপ, নোয়াখালীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন উড়িরচর সচেতন নাগরিক ছাত্র জনতা। 

চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার  অন্তর্গত বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচর । উড়িরচরের জনবসতি  প্রায় ৪৫ হাজার । তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এক জনগোষ্ঠী। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করলেও তাদের জীবনের স্বাধীনতা যেনো শৃঙ্খলাবদ্ধ! দেশের বিভিন্ন এলাকায় দৃশ্যমান  উন্নয়ন হলেও এই দ্বীপাঞ্চলে উন্নয়নের লেশ মাত্র লাগেনি যা উল্লেখযোগ্য! 

মৌলিক অধিকার বলতে তাদের পায় শুধু পেট ভরে খাওয়া।
নাগরিক সুবিধার মধ্যে পেয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সুবিধা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সুবিধাও পেয়েছেন। অথচ মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা লিপিবদ্ধ থাকলেও তাদের জীবনে অনেক মৌলিক অধিকার তাদেরকে ছুঁতে পারেনি। তারা পেট ভরে খেতে পায়, পরিধেয় বস্ত্র তাদেরকে সভ্যতা দিয়েছে।  বাসস্থানের কথা বলতে গেলেই সামনে জটিল সমস্যা এসে হাজির হয়। উড়িরচর বাসীদের জন্মই যেনো এক আজন্ম পাপ। তাদের বাসস্থান থাকলেও সেভাবে নেই কোন উচ্চ শিক্ষা বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ। আর সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় হলো চিকিৎসা সেবা নেওয়ার মত কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বা হাসপাতাল নেই।  অথচ প্রায় অর্ধ লক্ষ জনবসতির জন্য এ যেনো এক অবিচার!

উড়িরচর বাসীদের জীবন যেনো জন্ম থেকে পাপের ফসলে জর্জরিত!  যেখানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সেক্টর, বিভিন্ন খাতে ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলেও এই চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে ছিটে ফোটাও উন্নয়নের বা আশীর্বাদের সংবাদ পৌঁছেনি।

গত পনেরোই ফেব্রুয়ারী ২০২৫ এক প্রসূতি মা সন্তান জন্মদান করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে  তাকে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত ব্যবস্থা উড়িরচরে না থাকায় নোয়াখালীতে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য রওয়ানা হলে কোম্পানিগঞ্জের চর এলাহী বাজার পৌঁছালে প্রসূতি মা মৃত্যু বরণ করেন!  যা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কখনোই মেনে নেওয়ার মত নয়। সত্যিই হৃদয় বিদারক ঘটনা! যদি উড়িরচরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতো এবং যদি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকতো তাহলে তো প্রসূতি মায়ের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করতে হতো না। তাকে সময় মত হাসপাতালে নেওয়া যেতো ও সুনিপুণ চিকিৎসা সেবায় একজন মা তার আদরের নাবালক  সন্তানদের রেখে অকালে বিদায় নিতেন না। 

শুধু এই মৌলিক সমস্যা গুলোই নয় উড়িরচর বাসীদের জীবন সত্যিই অভিষপ্ত।  তাদের জীবনের চার পাশে ঢেউ আর ঢেউ শত বিপদে ডেকেও পায়না পাশে পাশে কাউকে,
মানবতার হাত বাড়িয়ে পাশে দাড়ায়নি কেউ!

বহুবছর বহুকষ্টে বার বার আছাড় খেয়েও তারা টিকে আছে মাথা তুলে দাড়াবার বাসনায়। উড়িরচর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পেলেও তাকে দিনের বেশির ভাগ সময়ই ব্যয় করতে হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারনে। অথচ বাংলাদেশের বহুস্থানে বিনা কারনে টাকা পয়সা ব্যয় করা হয়েছে, অথচ উড়িরচর বাসীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সংস্কারে কোন উদ্যোগ গৃহীত হয়নি।
সময় এসেছে, উড়িরচর বাসীরা, সচেতন নাগরিক ছাত্র জনতা আজ এক হয়েছে সাইক্লোন সেন্টার, হাসপাতাল, কলেজ, যোগাযোগ ব্যবস্থা অবকাঠামো গত উন্নয়ন সহ নাগরিক সুযোগ সুবিধা আদায়ে আজকে তারা সোচ্চার হয়েছে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার, মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন ছাত্র জনতার উদ্যোগে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন ।
এতে তাদের দাবিগুলো ছিলো। 
উড়িরচর বাসীদের নিম্নোক্ত দাবী দাওয়া নিয়ে সোমবার সকাল দশ ঘটিকায় বাংলা বাজারে এক যুগপৎ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

১)  নদী ভাঙ্গন রোধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  কারণ অনেক পরিবারই বাসস্থান হারা হয়েছে বারংবার। 
২) উড়িরচর টু কোম্পানীগঞ্জ ক্রসড্যাম নির্মাণে দ্রুত প্রকল্প  বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩) জরুরী ভিত্তিতে ২০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল/স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করতে হবে। 
৪) মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করতে হবে । উচ্চ শিক্ষা প্রসারে ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। 
৫) স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।  
৬) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কর্মসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে।
৭) দ্বীপাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহনসহ জরুরী ভিত্তিতে সীমানা জটিলতা নিরসন করতে হবে। 

উপরোক্ত সকল দাবি দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে  অংশগ্রহণ  করেন উড়িরচরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, উড়িরচর সমাজ কল্যাণ ছাত্র ইউনিটি, উড়িরচর ইসলামিক হেল্প সেন্টার ,মানব উন্নয়ন সংগঠন, ইত্যাদি।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয় ,
উড়িরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইমাম আজম (রহঃ) সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা, জনতার জনতা বাজার সোলাইমানিয়া দা.মাদ্রাসা, দ্বীপবন্ধু আলহাজ্ব মুস্তাফিজুর রহমান মাদ্রাসা , প্রাথমিক বিদ্যালয়,ব্যবসায়ীবৃন্দ  উড়িরচরের সর্বস্তরের জনগণ।

উপরোল্লেখিত আলোচ্য দাবি দাওয়া গুলো নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ নুর নবী রবিন ,সাবেক ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম জাবেদ, উড়িরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসান স্যার । জনতা বাজার সোলাইমানীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার  মাওঃ মোঃ বেলায়েত হোসাইন, দ্বীপবন্ধু আলহাজ্ব মুস্তাফিজুর রহমান মাদ্রাসার সুপার,
সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাফিয়া ময়না।
এছাড়াও আরো স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় সচেতন জন সাধারণ উন্মুক্ত বক্তব্য রাখেন ।
বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন  ।

উড়িরচর বাসীদের সকলের প্রাণের দাবি আলোচ্য 
বিষয়গুলো সরকার বাহাদুর যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করেন । সরকারের মানবিক ও নেকদৃষ্টি প্রত্যাশায় অপেক্ষমান 
উড়িরচরবাসী।

(এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ)