"নারী দিবসঃ নারী দিBoss" চাটমোহরে শিল্প শিক্ষার হাল ধরেছেন যে মহিয়সী নারীরা
সারাদেশে শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) পালিত হয়েছে নারী দিবস। তদ্রূপ পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায়ও পালিত হয়েছে নারী দিবস। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য, সংসার সমানভাবে সামলে এগিয়ে যাচ্ছেন আজকের মহিয়সী নারীরা।

"নারী দিবসঃ নারী দিBoss"
চাটমোহরে শিল্প শিক্ষার হাল ধরেছেন যে মহিয়সী নারীরা
সারাদেশে শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) পালিত হয়েছে নারী দিবস। তদ্রূপ পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায়ও পালিত হয়েছে নারী দিবস। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য, সংসার সমানভাবে সামলে এগিয়ে যাচ্ছেন আজকের মহিয়সী নারীরা।
পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায় বহুমাত্রিক শিল্প শিক্ষার একটা জায়গা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত চিত্রগৃহ চাটমোহর। এই প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরে আছেন তিনজন নারী- শাহিদা সুলতানা লিপি, ফরিদা পারভিন ও রুমি খাতুন। যাদের মমতাময় দেখভালে পরম যত্নে টিকে আছে এ সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি।
আর নারী দিবসে মহিয়সী নারীদের কর্মসম্পৃক্ততা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কথা হয় অত্র স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান চিত্রগৃহ চাটমোহর এর কর্ণধার আসাজুজ্জেমান জেমান আসাদ এর সাথে, তিনি স্ববিস্তারে খুলে বলেন সব কথা। তুলে ধরলাম তার কথা।
নৃত্য শিক্ষক আশা বিশ্বাস, যিনি টিকিয়ে রেখেছেন ধ্রুপদী নাচের ধারা।
শুক্লা শর্মা যিনিও এক সময় এ প্রতিষ্ঠানে অংকনের হাল ধরেছিলেন।
চেতনায় চাটমোহর আজ নারী দিবসে চাটমোহরের শিল্প-শিক্ষায় হাল ধরা কয়েকজন মহিয়সী নারীর আলোকিত ভূমিকা তুলে ধরছে! সকল নারীর প্রতি নারী দিবসের সম্মান হিসাবে-
Shahida Sultana Lipi-
বোঁথড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা সুলতানা লিপি। শিক্ষকতা, সংসারের বাহিরে যিনি একজন মা। নিজের মেয়েকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মানুষের মত মানুষ করতে যিনি মেয়েকে নিয়ে ছুটে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়। পাবনায় প্রতিযোগীতা, ভাঙ্গুড়ায় বইমেলা, উপজেলায় কোন অনুষ্ঠান, কোন সামাজিক উদ্যোগ, সকল জায়গায় মেয়ের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে ছুটে বেড়ান।
চেতনায় চাটমোহর প্রযোজনায় নাটক গ্রহ মানবে উনার বড় মেয়ে তানহা নেপথ্য কন্ঠ, গান এবং শেষ দৃশ্যে মঞ্চে প্রদীপ নিয়ে এসেছে।
'অন্য আলো' নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে তানহা।
এ দুটি নাটকের রিহার্সেলে তানহার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বছরব্যাপী সন্ধ্যার পর তিনি নিয়ে এসেছেন, তানহা নাটকের রিহার্সেল করেছে, মা হিসাবে তিনি অনুশীলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। অপেক্ষা করতে করতে কখনো কখনো নাটকে আলো জ্বেলেছেন, মঞ্চে প্রদীপ নিয়ে গেছেন, নেপথ্য কন্ঠ দিয়েছেন।
এখন তিনি উনার চাকুরী, সংসারের ঝামেলা শেষ করে চিত্রগৃহ চাটমোহরে স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। চাটমোহরের শিশুদের শিল্প শিক্ষায় উনি নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন চিত্রগৃহ চাটমোহরে।
রুমি খাতুন- (Fawzia Fariha)
একজন মা হিসাবে যিনি সংসার সামলে দুই সন্তানের পড়ালেখা ও সহশিক্ষার দিকটা দেখেন, যেমন অন্য মায়েরা দেখে থাকেন। নিজ সন্তানের আঁকাআঁকি দেখে যিনি নিজেও উৎসাহী হয়ে আপন মনে আঁকেন। এই আঁকাটাও এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, দীর্ঘদিন পর চাটমোহরে মঞ্চে ফেরা নাটকটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিনি।
চিত্রগৃহ চাটমোহরে শিক্ষার্থী বেড়েছে। একজন শিক্ষকের পক্ষে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে যায়, তাই তিনি সহযোগী শিক্ষক হিসাবে অংকন শিক্ষক উল্লাস স্যারকে ক্লাসে সহযোগীতা করে চলছেন।
এখন চিত্রগৃহ চাটমোহরে স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
ফরিদা ইয়াসমিন (Farida Yasmin)
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। শিক্ষকতা, সংসার সামলে একমাত্র সন্তান ইসামকে গড়ে তুলতে ছবি আঁকা, নাচ, গান সকল বিষয়ে সন্তানকে নিয়ে ছুটে বেড়ান মথুরাপুর থেকে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, পাবনা।
ছেলে নাচ শিখবে এ নাক বাঁকানো ভ্রু কোঁচানো ধারণা ভেঙ্গে তিনি ছেলেকে সকল বিষয়ে পারদর্শী করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। ফলে পড়ালেখার পাশাপাশি শিল্পের বিভিন্ন শাখায় তার সন্তান হয়ে উঠছে আরো চৌকশ।
নিজ সন্তানকে শিল্প শিক্ষায় চিত্রগৃহ চাটমোহরে নিয়ে আসতে আসতে উনি উনার সন্তানের প্রতি স্নেহটা এখন প্রতিষ্ঠানকেও দিচ্ছেন। নিঃস্বার্থ শ্রমে চিত্রগৃহ চাটমোহর দেখ ভাল করে চলছেন তিনিও।
আশা বিশ্বাস(Asha Biswas)
কর্মজীবী নারী হিসেবে সপ্তাহে ৬ দিন পাবনায় অফিস। একদিন যে ছুটি পান, সেদিন বিশ্রামের জন্য না রেখে নাচ শেখানোর জন্য সকালে জোনাইল মিশন, বিকালে চিত্রগৃহ চাটমোহর ছুটে বেড়ান।
এ জন্য প্রতি সপ্তাহে ছুটির এ দিনটিতে দুপুরে তাকে চলতিপথে পাউরুটি, চা-বিস্কুট খেয়েই দুপুর পার করতে হয়।
তার এই নাচ শেখানোর শখেই টিকে আছে চিত্রগৃহ চাটমোহরে নাচের শাখা। টিকে আছে উপজেলার একমাত্র নাচ শেখার এ প্রতিষ্ঠানটি।
শুক্লা শর্মা (Sukla Sharma)
চিত্রগৃহ চাটমোহর তখন খুবই সংকটে, অংকন শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। তখন চাটমোহরের পুত্রবধু শুক্লা শর্মা এগিয়ে এলেন। তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে যাতায়াত করে চাটমোহরের এই শিল্প বিদ্যালয়টির হাল ধরেছিলেন।
একজন নারীর শিল্পের জন্য এই নিবেদন মুগ্ধ করার মত।
এর বাহিরে(Sonchari Haque) ও সৈয়দা তানিয়া ফেরদৌস অতিথি শিক্ষক হিসাবে চিত্রগৃহ চাটমোহরে ক্লাস নিয়েছেন। উনাদের সকলের এই অংশগ্রহন না থাকলে চিত্রগৃহ চাটমোহর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
৩০৫.৬৩ বর্গকিলোমিটারের এক উপজেলায় শিশুদের শিল্প শিক্ষা টিকিয়ে রাখা মূল অবদান এই নারীদের।
চেতনায় চাটমোহর এই কয়েকজন নারীকে তুলে ধরে আজকের নারী দিবসে সকল নারীকে সম্মান জানাচ্ছে।
(এস এম মনিরুজ্জামান আকাশঃপাবনা জেলা প্রতিনিধি)