বাঁশখালীতে গাছ কেটে বনদস্যুদের লুটপাট, ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রাম এলাকায় ২০ লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগে ২৯ জন বনদস্যুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি।

বাঁশখালীতে গাছ কেটে বনদস্যুদের লুটপাট, ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাঁশখালীতে গাছ কেটে বনদস্যুদের লুটপাট, ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রাম এলাকায় ২০ লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগে ২৯ জন বনদস্যুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি। মামলায় আরও ১৫০/২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন একই এলাকার আমান উল্লাহর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ এয়াছিন (৪৮)। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের হস্তক্ষেপে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঘটনার দীর্ঘ এক মাস পর অবশেষে এই মামলা দায়ের করলেন।
মামলার আসামিরা হলেন, কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রাম এলাকার মৃ*ত কালামিয়ার ছেলে আজগর আলী (৫০), একই এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে আবদুল কাদের (৬০), জাকের আহমদের ছেলে রুবেল (২২), লালমিয়ার ছেলে মো. আলম (২৪), মৃ*ত আলী আহমদের ছেলে আনোয়ার (২৬), মৃ*ত কালামিয়ার ছেলে আবদুল মুবিন (৪০), আবদুল কাদেরের ছেলে জমির উদ্দিন (২৮), মৃ*ত আবদুল খালেকের ছেলে আলী আকবর (৫৫), মৃ*ত আবদুল জলিলের ছেলে মো. ফারুক (৩২), হোসেন আহমদের ছেলে রুবেল (২৩), মৃ*ত আবদুর রশীদের ছেলে দলিল আহমদ (৫০), মৃ*ত নজির আহমদের ছেলে আলী হোসেন (৬০), মৃত মোজাফফরের ছেলে আবুল কাশেম (৪০), জিয়াউদ্দিন এর ছেলে সেলিম (২৮), মৃ*ত আসকর আলীর ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৬৫), মৃ*ত আবদুল করিমের ছেলে আবদুল মান্নান (৬০), মৃ*ত জহুর আলীর ছেলে আজি আহমদ (৬৭), আজিজ আহমদের ছেলে শমশু (২৮), মৃ*ত অছিউর রহমানের ছেলে জামাল (৫০), মৃ*ত আবদুর সাত্তারের ছেলে ফোরকান (৫৮), মৃ*ত আলী আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪০), আলী আজগরের ছেলে আনিছ (২৩), মৃ*ত নজির আহমদের ছেলে আলী হোসেন (৩৫), মৃ*ত সোলতান আহমেদের ছেলে ফরিদ আহমদ (৬৫), মৃ*ত কবির আহমদের ছেলে আবুল কালাম (৫৫), মৃ*ত অছিউর রহমানের ছেলে জাকের আহমদ (৫৭), মৃ*ত আলী মিয়ার ছেলে আক্তার হোসেন (৫০), জাফর আহমদের ছেলে খোরশেদ (২৭), মৃ*ত আলী মিয়ার ছেলে ফোরকান (৫৫) সহ অজ্ঞাত আরও ১৫০/২০০ জন।
অভিযোগ ও মামলা সূত্র জানায়, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু বাহিনী তৈরি করে এলাকার নিরীহ মানুষের দলিল ও খতিয়ানভুক্ত জায়গা জবরদখল এবং সরকারি পাহাড়-বনভূমি দখল করে আসছে  বলে মামলার এজাহারে বলা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ নভেম্বর সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পালেগ্রাম এলাকায় মো. এয়াছিন এর মালিকানাধীন জায়গায় ফলজ গাছ কেটে লুটপাট চালায় আসামিরা। এসময় তারা এয়াছিনের জায়গা দখল করার উদ্দেশ্যে কয়েকবার বাগানে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে গাছ কাঁটার চেষ্টা করে এবং তপশীলের জায়গা তাদের বলে দাবি করে। সেদিন দা, করাত ও কুড়াল দিয়ে কেটে ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের গাছ ট্রাকযোগে লুট করে নিয়ে যায়। সেদিন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে মসজিদের মাইকে ডাকাত আসছে বলে এলাকার মানুষকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে আসামিরা। পরে সেনাবাহিনীর একটি দলও ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা পালিয়ে যায়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি গাছ কেটে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এসময় তারা পার্শ্ববর্তী সরকারি কবরস্থানের দেয়াল ভেঙে দেয়। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
মামলার বাদী মোহাম্মদ এয়াছিন জানান, 'আসামিরা আমাদের দখলীয় ভূমিতে সৃজন করা বাগানের বহু বছরের পুরোনো প্রায় ৪০টি লিচু গাছ, ১০টি বড় আম গাছ, একাশি গাছ ২০টি, গামারী গাছ ৬০টি, মেহগনি গাছ ৪০টি, গর্জন গাছ ১০টি দা, কুঁড়াল ও করাত দিয়ে কেটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে প্রতিকার না পেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছি। আসামীরা মামলার খবর পেয়ে আমার মামলার স্বাক্ষীদের নানাভাবে মারধরের হুমকি-ধমকী দিচ্ছে।'

এ বিষয়ে জানতে প্রতিপক্ষের আব্দুল কাদের ও আব্দুল মান্নানের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, 'বেআইনীভাবে গাছ কাটার অভিযোগে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২৩ সালের ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০/২০০ জনের বিরুদ্ধে সি.আর মামলা দায়ের করেন মামলার বাদী এয়াছিন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।'

বাঁশখালী থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, 'মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আনিছুর রহমান চট্টগ্রাম